Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

 

ফিলিস্তিনিদের বসতভিটা ছাড়তে বাধ্য করছে ইসরায়েল




ফিলিস্তিনিদের বসতভিটা ছাড়তে বাধ্য করছে ইসরায়েলি সরকার। গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করতে হামলার পাশাপাশি পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এই অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে গাজার পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে ফিলিস্তিনি জনগণকে চরম দুর্ভোগের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদুলুতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।


প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ব পানি দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া এক ভাষণে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, দখলদার শক্তি (ইসরায়েল) আমাদের জনগণের দুর্ভোগ, বাস্তুচ্যুতি এবং ধীরে ধীরে মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করার জন্য পানিকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।

গাজায় ইসরায়েলি অবরোধের কারণে মৌলিক মানবিক পরিষেবা ভেঙে পড়েছে। খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির পাশাপাশি পানির সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মাহমুদ আব্বাস বলেন, বিশেষ করে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে এবং মানবিক সহায়তা আটকে রেখে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন রেজলিউশন লঙ্ঘন করছে।


ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, গাজার পানির সংকট এতটাই ভয়াবহ যে হাজারো শিশু নিরাপদ পানির অভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। অনেকেই দূষিত পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছে, যা তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলছে। প্রেসিডেন্ট আব্বাস বলেন, গাজার শিশুদের জন্য নিরাপদ পানি পাওয়া এক কঠিন বাস্তবতা। তারা তৃষ্ণায় মারা যাচ্ছে, অথচ বিশ্বের অন্য শিশুদের মতো সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অধিকার তাদেরও থাকা উচিত।

মাহমুদ আব্বাস আরও বলেন, ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনিদের ভূমি থেকে উৎখাত করতে পরিকল্পিতভাবে পানি সংকট তৈরি করেছে। এটি তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডার অংশ। তারা ভূগর্ভস্থ এবং ভূপৃষ্ঠের পানির সব উৎস নিয়ন্ত্রণ করছে, যাতে ফিলিস্তিনিরা বাস করতে না পারে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। টানা ১৫ মাসের এই আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও, দুই মাস যেতে না যেতেই ফের হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল।

গত মঙ্গলবার নতুন করে বিমান হামলা চালিয়ে ৭০০-এর বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। আহত হয়েছে আরও এক হাজারের বেশি মানুষ। এতে জানুয়ারিতে হওয়া যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তি ভেস্তে গেছে।

গাজায় ক্রমবর্ধমান পানি সংকট এবং ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, বিশ্ববাসীকে বুঝতে হবে, ফিলিস্তিনি জনগণের জীবন রক্ষা করা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানাই, তারা যেন গাজার জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং অবিলম্বে গাজার মানবিক সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের ওপর কোনো কার্যকর আন্তর্জাতিক চাপ পরিলক্ষিত হয়নি।

গাজায় আরও এক হামাস নেতা নিহত

গাজার নাসের হাসপাতালে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল বারহুমসহ দুজন নিহত হয়েছেন। এই হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেই আল-মাওয়াসিতে ইসরায়েলি বাহিনী একটি তাঁবুতে বোমা হামলা চালিয়ে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য সালাহ আল-বারদাউইলকে হত্যা করেছে।

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হামাসের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা সালাহ আল-বারদাউইল নিহত হন। স্থানীয় সময় রোববার সকালে এক হামাস কর্মকর্তা বিবিসিকে এ তথ্য জানান। স্থানীয়দের দাবি, ওই বিমান হামলায় হামাসের রাজনৈতিক দপ্তরের সদস্য বারদাউইল এবং তার স্ত্রী নিহত হয়েছেন। তবে এ নিয়ে তাৎক্ষনিকভাবে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করেননি।

প্রায় দুই মাস যুদ্ধবিরতির পর মঙ্গলবার থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় ব্যাপক হামলা চালানো শুরু করে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। তবে হামাস ইসরায়েলের এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং পাল্টা অভিযোগ করেছে, কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল।

এদিকে ইয়েমেনেও সমানতালে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইয়েমেনের দুটি এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর মধ্যে রাজধানী সানার একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাও রয়েছে যেখানে কমপক্ষে একজন নিহত এবং ১৫ জন আহত হয়েছেন।

নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়াল

রাফাহ এবং খান ইউনিসের কয়েকটি বাস্তুচ্যুত শিবিরে ভয়ংকর বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এছাড়াও চলে স্থল অভিযান, ইসরায়েল থেকে ছোড়া হয় কামানের গোলা। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের এসব হামলায় নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে।

হামাসের নিয়ন্ত্রণাধীন গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৪১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর ফলে চলমান গাজা যুদ্ধে এই পর্যন্ত ৫০ হাজার ২১ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও দুটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের সংখ্যায় এই মরদেহ দুটিও যুক্ত করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলিদের হামলায় ৬১ জন আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এর ফলে ইসরায়েলি আক্রমণে মোট আহতের সংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার ২৭৪ জনে দাঁড়িয়েছে।

Post a Comment

0 Comments