Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

 

সৈয়দপুরে ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র যেন দুর্নীতির আখড়া



সৈয়দপুরে ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোরছালিনের স্বেচ্ছাচারিতায় দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এর প্রতিবাদ করায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গণহারে বদলি করা হয়েছে। ওই কর্মকর্তার দুর্নীতির কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রাহকরা। যেকোনো সময় বদলি ও হয়রানির আতঙ্কে অতিষ্ঠ থাকেন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জানা যায়, ১৫০ মেগাওয়াট নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঠিকাদারদের ওয়াপদার পরিত্যাক্ত ভবনের সংরক্ষিত লাখ লাখ ইট ঠিকাদারদের কাছে গোপনে বিক্রি করে দেন। এই পুরাতন ইট ভেঙে ঠিকাদাররা খোয়া তৈরি করে বর্তমানে বিভিন্ন প্রকল্পের রাস্তাসহ একাধিক নির্মাণকাজ করছেন। বিদ্যুৎ শ্রমিকদের পোশাক সরবরাহে ঠিকাদারদের সঙ্গে মোটা অঙ্কের কমিশন বাণিজ্য করে নিম্নমানের পোশাক ক্রয় করেন। এসব ব্যবহারের অযোগ্য পোশাক ব্যবহার করতে পারছেন না শ্রমিকরা। তিনি যোগদানের পর হতে প্রতি মাসে ভুয়া টিএডিএ বিলের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছেন। ডিপিএস’র সরঞ্জাম ও ২ হাজার টাকার বৈদ্যুতিক বাতি টেন্ডারের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকায় ক্রয় করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি পুরাতন ৩২ মেগাওয়াট ডিপিএস তেল ট্যাঙ্কার ভেঙে ১ হাজার টন স্ক্যাপ লোহাকে তিনি মাত্র ৫০০ টন দেখিয়ে নিলামকারী প্রতিষ্ঠানকে ১ হাজার টন লোহা বুঝিয়ে দেন। অতিরিক্ত ৫০০ টন লোহা দেওয়ার সময় স্থানীয় সাংবাদিক ও জনতার বাধার মুখে গেটপাস নিয়ে আউট হওয়া ১০০ টন লোহা রংপুর হতে পুনরায় ফেরত নিয়ে এলেও বাকি ৪০০ টনের কোনো হদিস নেই। অফিস চত্বরে স্তূপকৃত ৩ লাখ ইট ৬০ হাজার ইট দেখিয়ে ইট বের করার সময়ে স্থানীয় জনতার বাধার মুখে পড়েন। ইটের গাড়ি পাচারের সময় স্থানীয়রা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দিলে ইট ডেলিভারি বন্ধ করে দেন। অফিস চত্বরে প্রতি বছরে পৌরসভার কর্মচারী দিয়ে ঘাস কেটে তিনি ভুয়া ভাউচার তৈরি করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। নির্বাহী প্রকৌশলী তার নির্ধারিত বাড়িতে না থেকে অবৈধভাবে ভিআইপি রেস্ট হাইসে নামমাত্র মূল্যে দীর্ঘদিন ধরে পরিবারসহ বসবাস করে আসছেন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় চাকরির সুবাদে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তিনি নিজেকে সর্বেসর্বা বনে যান বলে অভিযোগ রয়েছে। একই কর্মস্থলে তিনি দীর্ঘ ৫ বছর ধরে কর্মরত থাকায় এবং আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট হওয়ার কারণে নিজেকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে ভেবে তার দুর্নীতি নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতন হলেও তিনি এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এ ছাড়া তিনি আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন রকম ট্যুরসহ নানা রকম সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর স্থানীয় জনগণ ও ওই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রকৌশলীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করলে বিদ্যুৎ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নীলফামারী জেলা শাখার বিএনপি-সমর্থিত সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ ৭ জন সেটআপ কর্মচারীকে অন্যত্র বদলি করেন।এ ব্যাপারে একাধিক কর্মচারী জানান, নির্বাহী প্রকৌশলীর দুর্নীতি এখন ওপেন সিক্রেট, তবে প্রতিবাদ করলেই বদলি। তার দুর্নীতির অনুসন্ধান করলে আরও বড় দুর্নীতির সন্ধান পাওয়া যাবে। এ ব্যাপারে সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল গফুর সরকার জানান, বদলিকৃতরা সবাই জাতীয়তাবাদী আদর্শের, তাদের অন্যায়ভাবে বদলি করা হয়েছে। বদলিকৃতদের পাওয়ার স্টেশনে খুবই প্রয়োজন, অথচ আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তদের কোনো প্রয়োজন না থাকার পরও তিনি তাদের রেখে দিয়েছেন। নির্বাহী প্রকৌশলীর অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদন্তের দাবি করেন। এ ব্যাপারে নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোরছালিন বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা। তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে রেস্ট হাউসে অবস্থান করছেন এবং ফিরিয়ে আনা লোহা এখনো জমা পড়ে রয়েছে। তবে ইটের ব্যাপারে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

Post a Comment

0 Comments