Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

 

মুন্নাকে মনে করিয়ে দিলেন হামজা 


বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম দুবাই থেকে ঢাকায় ফিরেছিল মুখ ঢেকে। শিলং থেকে ফুটবল দলটা কিন্তু ফিরলো মাথা উঁচু করে। সৌজন্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রবাসী এক ফুটবলার হামজা দেওয়ান চৌধুরী। একেক জনের উপস্থিতি একটা পুরো দলকে কতটা বদলে দিতে পারে, সেটা আমরা প্রত্যক্ষ করলাম শিলংয়ে। সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারলে, বাংলাদেশের এই দলটা ভারতের মাটিতে প্রথম ভারতকে হারানোর রেকর্ডটাও করে ফেলতে পারত, যা তারা পারেনি গত পঞ্চাশ বছরে। 

বেঙ্গল টাইগার্স বনাম ব্রু টাইগার্স ...লড়াইয়ের ফয়সালা আপাতত হলো না বটে, আমাদের চোখ কিন্তু খোলা থাকবে নভেম্বর মাসে ফিরতি ম্যাচ পর্যন্ত। মনে রাখতে হবে, চোট সমস্যায় শিলংয়ে খেলতে পারেননি ভারতের পাঁচ নিয়মিত প্লেয়ার। ড্র খেলে বাংলাদেশ দল যদি আত্মপ্রসাদ অনুভব করে, তাহলে ভুল করবে। গত এক সপ্তাহ ধরে ফুটবল নিয়ে বাংলাদেশিদের মধ্যে যা উম্মাদনা লক্ষ করলাম, তাতে আমি অভিভূত। এই ফুটবল আকৃতি মারাত্মক ধাক্কা খেয়েছিল, ক্রিকেটে বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকে। এই পটপরিবর্তন আমাদের এখানেও হয়েছে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ইন্ডিয়া টিমে ঢোকার পর থেকে। ভুক্তভোগী এপার বাংলার ফুটবলপ্রেমীরাও। আইপিএলের দাপটে এখন তারা একপ্রকার কোণঠাসাই বলা যায়। আপনারা ভাগ্যবান, হামজা চৌধুরীর মতো একজনকে পেয়ে গেছেন। যিনি একার ক্যারিশমাতে ফুটবল মাঠে লোক টানতে পারবেন।

টিভিতে শিলংয়ের ম্যাচ দেখতে বসে সত্যিই চমকে উঠেছিলাম, হামজাকে দেখে। ঝাঁকড়া চুল, ওকে শুরুতে রুদ গুলিত বলে মনে হচ্ছিল। চল্লিশ বছর আগের সেই সুরিনামি বংশোদ্ভূত ডাচ ফুটবলার। গুলিতের মতো হাইপ্রেসিং ফুটবল খেলার দক্ষতা এবং টেকনিক্যাল স্কিল হয়তো নেই, কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যে নিশ্চিত হয়ে গেলাম, গুলিতের সঙ্গে হামজার একটা ব্যাপারে খুব মিল আছে। মাঠে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা, যা একটা টিমকে অনেক উচ্চতায় তুলে নিয়ে যেতে পারে। ইউরো কাপ আর বিশ্বকাপে গুলিতের অনেক ম্যাচ নিজের চোখে দেখেছি। টিভিতে ইতালির এসি মিলানের ম্যাচও। তাই তুলনা না করেও নির্দ্বিধায় বলতে পারি, হামজা সতীর্থদের গাইড করতে পারে, বিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিতে পারে, ডিফেন্স করার সময় ঠিক জায়গায় পৌঁছুতে পারে। স্রেফ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে অপচয় না করে শিলংয়ে হেভিয়ার ফার্নান্ডেজ আরো একটু আক্রমণের স্বাধীন। 

প্রথম ম্যাচ দেখে কোনো প্লেয়ার সম্পর্কে চূড়ান্ত মতামত দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। কিন্তু অবাক হয়ে দেখছি, বাংলাদেশের ফুটবল মহল লাগামহীন প্রশংসা করে যাচ্ছে হামজা সম্পর্কে। কেউ কেউ তো ওকে এমনও বলে বসলেন, বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ফুটবলার। জনগণের স্মৃতি এত কম হতে পারে! সামাদের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম, বাংলাদেশিরা কাজী সালাউদ্দিনকে ভুলে গেলেন? স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সুপারস্টার, যিনি হংকংয়ের একটা ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। মোনেম মুন্নাই-বা মুছে গেলেন কী করে মানুষের মন থেকে? কলকাতায় খেলে গেছেন মুন্না ইস্টবেঙ্গলের হয়ে। শিলংয়ের ম্যাচে সেকেন্ড হাফে হামজা আমাকে মুন্নার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন। হামজা ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে খেলেন, হপ্তায় ৫০ হাজার ইউরো (বছরে ২৬ লাখ ইউরো) রোজগার করেন এটাই শ্রেষ্ঠত্ব মাপকাঠি হতে পারে না কি? মুন্না কিন্তু কোনো অংশে কম ছিলেন না হামজার থেকে। বাংলাদেশে এখন এমন একটা পরিস্থিতি, কে কার মূল্যায়ন করতে যাবেন? 


হামজার সঙ্গে বাংলাদেশ ফুটবল সংস্থার (বাফুফে) কী চুক্তি হয়েছে জানি না। তবে নিশ্চিতভাবেই ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, উনি চার-পাঁচ দিনের জন্য শেফিল্ড ইউনাইটেড থেকে ছুটি পাবেন, বাংলাদেশের হয়ে প্রতি ম্যাচ খেলার আগে। অত অল্প সময়ের মধ্যে অন্য প্লেয়ারদের সঙ্গে উনি কতটা খাপ খাইয়ে নিতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এই বাংলাদেশ দলে এমন কেউ নেই, যিনি টেকনিক্যালি হামজার সমকক্ষ। তাই একা হামজার ওপর ভরসা করলে টিমের ভালো হবে বলে মনে হয় না। বংশোদ্ভূতদের নিয়ে এসে টিমের উন্নতি করার চেষ্টা করেছিল, এশিয়ার অনেক দেশ। চীন, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি।

কিন্তু কোনো লাভ হয়নি দেখে, একটা সময়ে তারা গ্রাস রুট ডেভেলপমেন্টের জন্য একাডেমি চালু করে। আফ্রিকার দেশগুলো, বিদেশের বংশোদ্ভূতদের রেখে ঘরোয়া অ্যাকাদেমি থেকে উঠে আসা প্লেয়ার মিশিয়ে দল বানাচ্ছে। মরক্কো, সেনেগাল, আলজেরিয়া, নাইজেরিয়া এই পদ্ধতিতে টিম তৈরি করে লাভবান হয়েছে। বাফুফের উচিত, বংশোদ্ভূত প্লেয়ারদের নিয়ে আসার পাশাপাশি গ্রাস রুট উন্নতির কথা ভাবা। না হলে ক্রিকেটের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবেন না। 

Post a Comment

0 Comments